বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর এবং সর্পরাজ হিন্দু দেবতা মনসার অনবদ্য কিংবদন্তী কাহিনী জানেন না এমন মানুষ খুবই অল্পই আছে। আদিযুগের বিখ্যাত কবি কানা হরিদত্ত, বিজয় গুপ্ত, বিপ্রদাস, পিপিলাই, বংশীদাসসহ বেশ কয়েকজন গীতিকবিতা রচয়িতা তাদের অনবদ্য রচনা পদ্মপুরান, মনসাপুঁথি, লোকগীতি ইত্যাদি গ্রন্থে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী জীবন্তরূপ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। কাহিনী চিত্রের নায়িকা বেহুলা ছিল শিবের কন্যা। বেহুলা, তার স্বামী লক্ষ্মীন্দরের সর্প দংশনে মৃত্যু এবং সর্পরাজ মনসা দেবীর মনসামুড়া এসকল কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাবেন চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার পূর্ব সহেদেবপুর ইউনিয়নের ভুঁইয়ারা গ্রামে। বেহুলার পৈত্রিক নিবাস দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে এই কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রামে। বর্তমানে বেহুলার পৈত্রিক বাড়িটি খন্দকার বাড়ি নামে পরিচিত। এটি একটি রাজবাড়ি ছিল। এই রাজবাড়ির দক্ষিন পাশেই রয়েছে একটি দিঘি, যা বেহুলার দিঘি নামে পরিচিত। এছাড়াও রাজবাড়িতে বেশ কিছু পুরনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এই উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে মনসার মুড়া দেখতে পাওয়া যাবে। এটি মনসার বাঁশঝাড় নামেও পরিচিত। প্রচলিত আছে এই মুড়ায় একসময় অসংখ্য সাপের বাস ছিল।
পুরাণে বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী, বেহুলার স্বামী লক্ষ্মীন্দরের পিতা চাঁদ সওদাগর ছিলেন দুর্গাদেবীর সেবক। মনসা ছিলেন দুর্গাদেবীর সতীনের কন্যা। রাজ্যে যেন মনসার পূজা না হয় সে জন্য দেবী দুর্গা চাঁদ সওদাগরকে নির্দেশ দিলে, চাঁদ সওদাগর তার রাজ্যে মনসা দেবীর পূজা বন্ধ করে। এরফলে মনসা দেবী ক্রোধান্বিত হয়ে একে একে চাঁদ সওদাগরের ৬ পুত্রকে হত্যা করে। সর্বশেষে চাঁদ সওদাগরের সবচেয়ে ছোট পুত্র লক্ষ্মীন্দরকে বাসর রাতে সর্প দংশনে হত্যা করে। লক্ষ্মীন্দর মনসার ক্রোধের শিকার হতে পাবে এই ভেবে চাঁদ সওদাগর নব পুত্রবধু এবং তার সন্তান লক্ষ্মীন্দরের জন্য নিছিদ্র লোহার বাসরঘর তৈরির নির্দেশ দেন। কিন্তু সর্পরাজ মনসার চাপে কর্মকার সেই বাসরঘরে একটি সুক্ষ্ম ছিদ্র রাখে, সেই ছিদ্র দিয়ে কালনাগ বাসরঘরে প্রবেশ করে লক্ষ্মীন্দরকে হত্যা করে। সেসময় বেহুলা বলে - 'আমি সতী নারী হলে অবশ্যই লক্ষ্মীন্দরকে বাঁচিয়ে তুলতে পারব, আমার স্বামীর শেষ কৃত্য না করে তাকে বাঁচানোর জন্য স্বামীসহ আমাকে সাগরে ভাসিয়ে দেন। বেহুলা ভাসতে ভাসতে হিমালয়ের কৈলাসপুরীতে মনসা দেবীর পুরীতে হাজির হয়। সেখানে তার শশুর-শাশুড়ি মনসা দেবীর পূজা অর্চনা করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বামী লক্ষ্মীন্দরের দেহ থেকে বিষ মুক্ত করে, সেই সঙ্গে তার ৬ ভাসুরের পুনঃজীবন এবং নদী পথে ডুবে যাওয়া তার শশুর চাঁদ সওদাগরের ধন-সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস নিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসে। বেহুলা সমস্ত ঘটনা তার শাশুড়ি সানকা দেবীকে জানালে ৭ পুত্র ও ধনসম্পদ ফিরে পাওয়ার আশায় চাঁদ সওদাগরকে মনসা দেবীর পূজা করতে রাজি করান। তারপর চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পূজা করার পরপরই মনসা দেবী চাঁদ সওদাগরের ৭ সন্তান ও ধন-সম্পদ ফিরে পায়।
Last Updated Date of This Artical : 0000-00-00