চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পাহাড়তলী রেলস্টেশনের নিকট বিখ্যাত এই ফ'য়েজ লেক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার, পাহাড় আর সবুজের এক অপূর্ব পরিবেশে এই ফ'য়েজ লেক। এটি একটি বিনোদন স্পটও। লেকে ঘুরতে চাইলে আপনাকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। পাশেই দেখতে পাবেন একটি চিড়িয়াখানা। লেকটি কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে কেউ না বলে দিলে আপনার মনে হবে, প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি এই ফ'য়েজ লেক।
১৯২৪-১৯২৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ইংরেজ প্রকৌশলী মি. ফয় এর পরিকল্পনা ও নকশার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এই ফ'য়েজ লেকটি। হ্রদটি সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার জন্য পানি সরবরাহ করা। ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, এই পানি সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে সে সময়ে ইঞ্জিনিয়ার ফয়'কে প্রধান করে Foy Water Scheme গঠন করা হয়েছিল। মিঃ ফয় বিভিন্ন সম্ভাবনাময় জরিপ চালিয়ে ১৯২৪-১৯২৫ সালে পাহাড়তলি নামক স্থানটির দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বাঁধ দিয়ে বিস্তীর্ণ এক কৃত্রিম জলাভূমির সৃষ্টি করেন। বাঁধটি প্রায় ১৩০ ফুট লম্বা এবং ৭০ ফুট উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিল। মিঃ ফয় এর অবদানকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই লেকটির নামকরন করা হয়েছিল ফয়'স লেক। পরবর্তীতে কালক্রমে লোকমুখে এই ফয়'স লেকটি ফয়েজ লেক নামে বেশি পরিচিতি পায়।
শুরুতে এই স্থানটি ঘন জঙ্গল থাকায় মানুষজনের আনাগোনা এখানে ছিল না। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই হ্রদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বিনোদন কেন্দ্র। প্রকৃতিপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় ১৯৯৩ সালে এই পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছিল মোহনা নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে ফ'য়েজ লেকটি পর্যটন এবং বিনোদন স্পট হিসেবে খুবই পরিচিতি লাভ করে। ২০০৪ সালে এই স্থানটি পর্যটন মন্ত্রনালয়ের অধীনে চলে আসে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় এই পার্কটির। পরিনত হয় একটি আন্তর্জাতিক মানের এমিউজমেন্ট পার্কে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে হ্রদটির উচ্চতা প্রায় ৩০০ ফুট। চাইলে পার্কের হ্রদটিতে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পার্কের অভ্যন্তরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান ও স্টল। এই লেকটি বাংলাদেশের তথা দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মানবসৃষ্ট স্বাদুপানির হ্রদ।
Last Updated Date of This Artical : 0000-00-00